বৈজ্ঞানিক নাম : Betta Splendens মিনিমাম ট্যাঙ্ক সাইজ : ২.৫ - ৫ গ্যালন পানির তাপমাত্রা : ২৩-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস pH লেভেল : ৬-৮ ফিশকিপিং এ নতুন...
বৈজ্ঞানিক নাম : Betta Splendens
মিনিমাম ট্যাঙ্ক সাইজ : ২.৫ - ৫ গ্যালন
পানির তাপমাত্রা : ২৩-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস
pH লেভেল : ৬-৮
ফিশকিপিং এ নতুনদের জন্য বেট্টা বা সিয়ামিজ ফাইটার খুবই সহজ এবং সুন্দর একটি পছন্দের নাম। লেজের আকার ও আকৃতির উপর ফাইটার বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সবচেয়ে কমন হচ্ছে ভেইল টেইল প্রজাতি। এছাড়াও হাফমুন, এলিফ্যান্ট ইয়ার, ডাম্বো ইয়ার, ক্রাউনটেইল তুলনামুলক দামী এবং আকর্ষনীয় প্রজাতি। এই ডকে বেট্টা কিপিং এর শুরুর কিছু কথা বলব, যাতে নতুনদের জন্য বেট্টা কিপিং শুরু করাটা খুব একটা কঠিন মনে না হয়।
ট্যাঙ্ক সিলেকশন: বেট্টা কিপিং এর প্রথম এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ন কাজ। অনেকের কাছেই শুনে থাকবেন ফাইটার খুব অল্প জায়গাতেই থাকতে পারে। একথায় কান দেবেন না। বেট্টার জন্য মিনিমাম পানির পরিমান হতে হয় ২.৫ গ্যালন। আর ছোট জার গুলোতে আপনি কখনোই ২.৫ গ্যালন পানি ধরে রাখতে পারবেন না। বেট্টা সুস্থ সবল থাকার জন্য তার চলাচল করার জন্য যথেষ্ট জায়গা দিতে হবে। ১২*১২*১০ সাইজের ছোট ট্যাংক বেট্টার জন্য খুবই ভাল একটা বাসস্থান হতে পারে। আপনি ট্যাঙ্ক ডিমেনশন যেমনই করেন মাথায় রাখতে হবে সেই ট্যাঙ্কের পানি ধারন ক্ষমতা যেন ২.৫ গ্যালন বা তার বেশি হয়।
ডেকোরেশন: আমার মতে লো-টেক প্ল্যান্টেড বেট্টার জন্য সবচেয়ে ভাল এনভায়রনমেন্ট। বেট্টা কিপিং এর শুরুতে অনেক এক্সপার্টরাও আমাকে এই সাজেশনই দিয়েছিলেন, এবং আমি অনেক কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি। কারন বেট্টা প্ল্যান্টস খুবই পছন্দ করে। প্ল্যান্টস এর জন্য Cabomba, Hornwort, Pennywort, Densa ব্যবহার করতে পারেন। এই প্ল্যান্ট গুলো খুব সহজে লো টেক সাবস্ট্রেটে টিকে থাকে। সাবস্ট্রেট হিসেবে হোয়াইট স্যান্ড, জিরো সাইজড রক, সিলেট স্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন। সবচেয়ে ভাল হয় যদি গার্ডেন সয়েল ব্যবহার করতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে গার্ডেন সয়েলের উপর ২ ইঞ্চি সিলেট স্যান্ড বা জিরো সাইজড গ্র্যাভেল দিতে হবে। স্যান্ড বা জিরো সাইজড গ্র্যাভেল দিতে বলার কারন হচ্ছে, বেট্টার খাবার খাওয়ার পর মাঝে মাঝে ময়লা জমে নিচে, তার সাথে মল ও জমে থাকে নিচে। বড় সাইজের রক হলে সেগুলো ফাক ফোকরে জমে থাকে, পরিস্কার করা কষ্টকর হয়।
প্ল্যান্টসের সাথে চাইলে নিজের মত করে সাজাতে রক ও বগ ইউজ করতে পারেন। প্ল্যান্টস ব্যবহার করার সবচেয়ে মজার দিকটা হচ্ছে রাতে আপনার বেট্টা যখন পাতার উপর গিয়ে ঘুমাবে, দেখতে আসলেই অনেক ভাল লাগে।
রক, বগ ও প্ল্যান্ট সেটাপের আগে অবশ্যই কোয়ারেন্টিন করে নিবেন।
তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হিটার ও থার্মোমিটার ব্যবহার করাটা জরুরী।
সাইক্লিং ও ফিল্ট্রেশন : ন্যানো ট্যাঙ্ক বা বেট্টা ট্যাঙ্ক এ তেমন বেশি ফিল্ট্রেশন লাগে না, একটা ছোট স্পঞ্জ ফিল্টারই যথেষ্ট কাজ করে। তবে ৪-৫ গ্যালন ট্যাঙ্ক হলে ছোট হব (HOB - Hang on back) ফিল্টার ব্যবহার করা ভাল। আর সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন যে কাজ, সাইক্লিং। ট্যাঙ্ক সেটাপের পর অবশ্যই সাইক্লিং কম্পলিট করতে হবে, তার আগে মাছ ট্যাঙ্কে ছাড়বেন না। সাইক্লিং সম্পর্কে ধারনা পেতে আর্টিকেলটি পড়ে দেখুন।
ফিল্টার ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখবেন পানির ফ্লো যেন খুব বেশি না হয়। অতিরিক্ত ফ্লো বেট্টার জন্য ক্ষতিকর।
লাইট: লাইট মুলত প্ল্যান্টের জন্য প্রয়োজন। কম আলো কিছু প্ল্যান্টের জন্য ক্ষতিকর। Anubias, Java Fern অল্প আলোতেও বেচে থাকে।
খাবার: বেট্টা ন্যাচারাল অবস্থায় পোকা মাকড়ের লার্ভা খেয়ে থাকে। কিন্তু বাজারে Azoo, Hikari ব্র্যান্ড এর ভাল পেলেট ফুড পাওয়া যায় বেট্টার জন্য। দিনে ১-২ বার খাবার দিলেই হবে। আমি প্রতিবেলা ৩-৪ দানা দিয়ে থাকি। এছাড়াও মাঝে মাঝে মশার লার্ভা বা মশা দিলেও বেট্টা খুব পছন্দ করে। বাজারে ব্লাড ওয়ার্ম কিনতে পাওয়া যায়, সেটাও বেট্টার খুব পছন্দের খাবার। সম্ভব হলে খাবারের তালিকায় ভ্যারিয়েশন রাখবেন, প্রতিদিন একই খাবার না দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন খাবার দিতে পারেন। আপনার বেট্টা খুশি থাকবে।
সবশেষে একটা কথা বলব, একটা ট্যাঙ্কে একটাই বেট্টা রাখবেন। পুরুষ বেট্টা সাধারনত অনেক এগ্রেসিভ হয়। আর এরা টেরেটরিয়াল হওয়াতে এরা নিজের এলাকায় অন্য কোন মাছ দেখলে পিটায় ঠান্ডা করে দিবে। আপনার জীবে দয়া না থাকলেও নিজের টাকার উপর অবশ্যই আছে :p . শুধুমাত্র ব্রিডিং এর সময় পুরুষ বেট্টা মহিলা বেট্টার সাথে কোর্টিং করে এবং সেটার জন্যও আলাদা প্রসেস আছে। ব্রিডিং এর সময়ে পুরুষ বেট্টা বাবল নেস্ট তৈরী করবে। তার আগে হুট করে মহিলা বেট্টা ট্যাঙ্কে ছেড়ে দেবেন না। একটা সুস্থ বেট্টাই আপনার ট্যাঙ্কের সৌন্দর্যের জন্য যথেষ্ট, যদি আপনি তাকে খুশি রাখতে পারেন।
রোগ-বালাই ও তার প্রতিকার:
বেট্টা বা ফাইটার যথেষ্ট হার্ডি ফিস হলেও, তাদেরও বিভিন্ন রোগ বালাই হতে পারে, ছোট খাটো ভুলের কারনে... এসব রোগের মধ্যে কমন কিছু রোগ হচ্ছে-
- ফিন রট
- ব্লোটিং
- ইচ
- ড্রপসি
- পপ আই
সচরাচর এই রোগগুলাই বেট্টার মধ্যে বেশি দেখা যায়, যদি না আপনি সঠিক এনভায়রনমেন্ট, ওয়াটার টেম্পারেচার, ও ওয়াটার কন্ডিশন ধরে রাখতে না পারেন। মনে রাখবেন, মাছ পানিতে থাকে, এদের সমস্যার সৃষ্টি হবে পানির বাজে কোয়ালিটির কারনেই। বেট্টা স্ট্রেসড হয়ে গেলেও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কাঠ বাদাম গাছের শুকনা পাতা ট্যাঙ্কে দিতে পারেন। এই পাতার ট্যানিন পানির pH কমায় আর বেট্টাকে স্ট্রেস ফ্রি রাখে। মনে রাখবেন, প্রতিকার করার চেয়ে প্রতিরোধ করা বেশি ভাল।
ব্রীডিং:
শুরুতেই বলব, বেট্টা কিপিং বা ফিশ কিপিং এ নতুন হলে শুরুতেই এই কাজে হাত দিবেন না... আমি নিজেও এই ভুল করেছিলাম, আর একটি খুবই ভাল ব্র্যান্ডের হিটার (দোকানদারের কথায়) এর কারনে আমার নিজের বেট্টার এনাল ফিন বাদে লেজ আর ডর্সাল ফিন পুরাপুরি ভাবে হারাতে হয়, এবং অতিরিক্ত ফ্লেয়ারের কারনে, ফিন ছিড়ে ফিন রট হয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে, সাথে সাথে স্টেপ নেওয়ায় আমার বেট্টা দ্রুত রিকভার করতে পেরেছে। ব্রীডিং এ হাত দেওয়ার আগে, নিজের বেট্টার ন্যাচার সম্পর্কে জানুন।
বেট্টার ব্রীডিং করার আগে পুরুষ বেট্টা বাবল নেস্ট করবে। এরপর আপনি ফিমেল বেট্টা কালেক্ট করতে পারেন, বা আগে থেকে থাকলে ভাল। ভাল হয়, যদি ইন্ট্রোডিউস করার কয়েকদিন আগে থেকে আলাদা ট্যাঙ্কে ২ বেট্টাকেই লাইভ ফুড দিতে।
ইন্ট্রোডাকশন - ফিমেল বেট্টাকে মেল বেট্টার ট্যাঙ্কে ইন্ট্রোডিউস করার জন্য, একটা ট্রান্সপারেন্ট কন্টেইনারে ফিমেল বেট্টাকে রাখুন, এরপর ঐ কন্টেইনার ট্যাঙ্কে রাখুন, এমন ভাবে রাখবেন যাতে কন্টেইনারের মুখ বাতাসে খোলা থাকে এবং কন্টেইনার পড়ে ফিমেল বেট্টার কন্টেইনারের এন্ট্রি এক্সপোজ না হয়ে যায়। মেল বেট্টা তখন ফিমেল বেট্টার দিকে ফ্লেয়ার করবে, কিছুক্ষন পর্যবেক্ষন করুন, এখানে আপনার সময় নিয়ে বসতে হবে, কখনো কখনো ১-২ ঘন্টাও লেগে যেতে পারে। একসময় ফিমেল বেট্টা মাথা সামনের দিকে ঝুকে সাবমিসিভ অবস্থায় থাকবে। লক্ষ্য করুন ফিমেল বেট্টার শরীরে ভার্টিক্যাল লাইন দেখা যায় কিনা। যদি স্পষ্ট ভার্টিক্যাল লাইন চলে আসে, তখন ফিমেল বেট্টাকে ট্যাঙ্কে ছেড়ে দিন। শুরুতে মেল বেট্টা ফিমেলকে চেজ করবে, এমন ৪-৫ মিনিটের মত হবে, বেশি চেজ করলে বা অতিরিক্ত এগ্রেসিভনেস দেখলে ফিমেল বেট্টাকে সরিয়ে ফেলাই ভাল। চেজ করার পর মেল বেট্টা ফ্লেয়ার করে ফিমেল বেট্টাকে বাবল নেস্ট এর নিচে আনার চেষ্টা করবে, তখন মেল বেট্টা তার লেজ নাড়িয়ে ফিমেল বেট্টাকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করবে। ফিমেল তখন মাথা নিচু অবস্থায় বাবল নেস্ট এর নিচে আসবে। এর মানে তারা কোর্টিং এর জন্য প্রস্তুত। আর যদি ফিমেল বেট্টা নিচে চুপ চাপ বসে থাকে, তাহলে ফিমেল বেট্টাকে ট্যাঙ্ক থেকে সরিয়ে ফেলুন।
কোর্টিং - এখানে তেমন কিছুই করার নেই, তারা তাদের কাজ করবে কিন্তু ফিমেল বেট্টা ডিম ছাড়ার সময় মরার মত পড়ে থাকবে, ভয়ের কিছু নাই, এটা স্বাভাবিক।
ডিম ছাড়া শেষ হয়ে গেলে মেল বেট্টা ডিম নিয়ে বাবল নেস্টে রেখে দিবে। ডিম ছাড়া শেষ, ফিমেল বেট্টাকে অন্য ট্যাঙ্কে সরিয়ে নিয়ে যান... এখন সব দায়িত্ব “ড্যাডি বেট্টার”।
হ্যাচিং - ২-৩ দিনের মধ্যে ডিম হ্যাচ হয়ে ছোট ছোট ফ্রাই হবে, ফ্রাই গুলো তখন বাবল নেস্টের সাথে লেগে থাকবে... তখন এদের খাবার দিতে হবে না। কিছুদিন পর ফ্রাই গুলা ফ্রিলি সাতার কাটা শুরু করবে, তখন মেল বেট্টাকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
ফ্রাই গুলাকে খাবার দিতে হবে ফ্রিলি সুইম করা শুরু করলে, খাবার হিসেবে ড্যাফনিয়া, মাইক্রোওয়ার্ম, সিদ্ধ ডিমের কুসুম দিতে পারেন। তবে ডিমের কুসুম পানি প্রচুর ময়লা করে।
২ মাস বয়সে মাইক্রো প্যালেট দিতে পারেন, তবে এডাল্ট বেট্টার খাবার দিলে খেতে পারবে না। ৩ মাসেই একটা বেট্টা পরিনত অবস্থায় চলে যায়... তখন একটা বেট্টা আরেক বেট্টার প্রতি এগ্রসিভনেস দেখানো শুরু করবে, তখনই আলাদা করে সবার জন্য আলাদা ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা করতে হবে।
ব্রীডিং এর পরিবেশ - ফ্রাই এর জন্য যথেষ্ট বড় ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা করা লাগবে, ১৫-২০ গ্যালন হলে ভাল হয়। হিটার থাকতে হবে, স্পঞ্জ ফিল্টার থাকা লাগবে। স্পঞ্জ বাদে হব ইউজ করলে ফ্রাই টেনে নিয়ে যেতে পারে হব। আর ব্রীডিং প্রসেসের সময় ফিল্টার অফ রাখতে হবে। আলমন্ড লিফ ব্যবহার করতে পারেন ট্যাঙ্কে। আর ব্রীডিং ট্যাঙ্কে সাবস্ট্রট না দেওয়া ভাল। বেয়ারবটম ট্যাঙ্ক ইউজ করতে পারেন।
আবারো বলছি একদম নতুন হলে ব্রীডিং করতে যাবেন না। শীতকালে ব্রীডিং থেকে দূরে থাকুন।
COMMENTS