আমাদের দেশীয় এত সুন্দর একটা মাছ খলিশা কিন্তু এতদিন অনেকটাই ছিল উপেক্ষিত। তাছাড়া তেলাপিয়ার দৌরাত্মে জলাশয়গুলোতে খলিশা দিনদিন বিলুপ্ত হয়ে...
আমাদের দেশীয় এত সুন্দর একটা মাছ খলিশা কিন্তু এতদিন অনেকটাই ছিল উপেক্ষিত। তাছাড়া তেলাপিয়ার দৌরাত্মে জলাশয়গুলোতে খলিশা দিনদিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আশার কথা, ইদানীং অনেকেই নেটিভসহ বিদেশী গোরামী কিপিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। আর এত সুন্দর রঙের মাছের প্রতি আকর্ষণ জাগবেই বা না কেন? তাই জনপ্রিয় কয়েক ধরনের গোরামীর খুঁটিনাটি নিয়েই আজকে লিখবো।
এই আর্টিকেলে বলা সব কথাই সব প্রজাতির ডোয়ার্ফ গোরামী সম্পর্কে। কিসিং গোরামী এবং জায়ান্ট গোরামীর ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য না। তো চলুন শুরু করা যাক-
স্পেসিজঃ বাংলাদেশের নেটিভ খলিশার মধ্যে সবচে কমন দুইটা জাত আছে। যথাঃ Trichogaster Fasciata এবং Trichogaster Lalius. এছাড়া অন্যান্য বিদেশী গোরামী যেমন Red Flame Dwarf, Powder Blue Gourami, Neon Blue Gourami, Yellow Gourami, Honey Gourami, Samurai/Chocolate Gourami, Three Spot Gourami, Gold Gourami, Opaline/Blue Gourami, Pearl Gourami ইত্যাদি জাতের গোরামী বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
ট্যাংক সাইজঃ
একজোড়া ডোয়ার্ফ গোরামীর ক্ষেত্রে মিনিমাম ট্যাংক সাইজ ১০ গ্যালন। এরা বাতাস থেকে সরাসরি মুখের সাহায্যে অক্সিজেন নেয়, ফুলকার সাহায্যে নেয় না। তাই এদের ট্যাংকের উচ্চতা কোনভাবেই ১৫ ইঞ্চির বেশী হওয়া উচিত না। প্ল্যান্টেড এবং হার্ডস্কেপ উভয় সেটাপেই রাখা যাবে এদের।
কম্প্যাটিবিলিটিঃ
এরা খুবই শান্ত এবং লাজুক প্রজাতির মাছ। প্রায় সব ধরনের ছোট এবং পিসফুল মাছের সাথেই এদের রাখা যায়। সকল প্রজাতির লাইভবিয়ারার ও সকল প্রজাতির টেট্রার সাথে এদের রাখা যাবে। সেমি অ্যাগ্রেসিভ ফিশ এঞ্জেলের সাথেও রাখা যেতে পারে, টাইগার বার্বের সাথে বা মেল বেটার সাথে রাখা যাবেনা।
ব্রিডিংয়ের সময়ে মেল গোরামী অন্য মেল গোরামীর প্রতি কিছুটা অ্যাগ্রেশন দেখাবে, তবে তা ভয়াবহ কিছুনা। অন্য প্রজাতির মাছের প্রতি এরা তখনো অ্যাগ্রেশন দেখায় না। তাই নিশ্চিন্তে কমিউনিটি ট্যাংকে এদের রাখা যায়।
ফিল্ট্রেশনঃ
গোরামী খুব একটা messy ফিশ না এবং এদের বায়োলোড কম। ফিল্ট্রেশন হিসেবে যা স্ট্যান্ডার্ড অর্থাৎ ঘন্টায় ট্যাংক ওয়াটার ভলিউমের পাঁচ গুণ বায়োলজিক্যাল এবং মেকানিকাল ফিল্ট্রেশন হলেই হবে। খুব স্ট্রং ফ্লো এরা পছন্দ করেনা তাই পাওয়ার ফিল্টার দিয়ে কেউ যেন আবার টর্নেডো তৈরী কইরেন না ট্যাংকে
খাবারদাবারঃ
একুরিয়াম ব্রীডগুলো পেলেট সরাসরি খাবে। ওয়াইল্ড কটগুলো প্রথমে খেতে পারবেনা বা উৎসাহ দেখাবেনা। তখন প্রথম কয়েকদিন মশা খেতে দিবেন। ট্যাংকে অন্য মাছকে পেলেট খেতে দেখলে ওরাও খাওয়া শুরু করবে, চিন্তার কিছু নেই। পেলেট ছাড়াও ড্রাই/লাইভ টিউবিফেক্স, মিলওয়ার্ম, মশা, মশার লার্ভা, কুঁচি করে কাটা সিদ্ধ গাজর বা শশা খেতে দেয়া যায়। খাবারে ভ্যারিয়েশন রাখতে পারলে এদের রঙ দেখে আপনার মাথা নষ্ট হয়ে যাবে!
জরুরি একটা পয়েন্ট, গোরামী সবচে বেশী আক্রান্ত হয় ড্রপসি রোগে। তাই পরিমিত পরিমাণে খাবার দেয়া খুবই জরুরি। কোনভাবেই ওভারফিডিং যেন না করেন সেটা মাথায় রাখবেন। দিনে এক-দুইবার খাবার দেয়াই যথেষ্ট। এরা সাধারণত হার্ডি ফিশ এবং আইডিয়াল কন্ডিশনে ৪ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
মেল-ফিমেল আইডেন্টিটিঃ
মেল সাধারণত ফিমেলের চেয়ে সাইজে বড় হয়। মেলগুলোর গায়ের রঙ বেশী ব্রাইট হবে। ফিমেলের গায়ের রঙ অপেক্ষাকৃত বিবর্ণ। সবচে সহজ চেনার উপায় হচ্ছে মেল গোরামীর Dorsal Fin হবে পয়েন্টেড বা চোখা, ফিমেলের ক্ষেত্রে তা রাউন্ড শেপের অর্থাৎ গোলাকার।
ব্রীডিংঃ
গোরামীর ব্রিডিং পদ্ধতি বেটা'র মতই প্রায়। মেল গোরামী বাবল নেস্ট তৈরী করবে ট্যাংকের যেকোনো এক কোণে এবং প্ল্যান্টস নিয়ে সেই বাবল নেস্টের চারপাশে জমা করবে। মুখে প্ল্যান্টস নিয়ে মেল গোরামী যখন বাবল নেস্টের চারপাশে জমা করে সেটা দেখার মত একটা দৃশ্য,পাখি যেমন খড়কুটো নিয়ে বাসা বাঁধে অনেকটা সেরকম। ফিমেল গোরামী আকৃষ্ট হলে এরা মেটিং করে ডিম ছাড়বে। মেল গোরামী ডিমগুলো তুলে বাবল নেস্টে রাখবে। শেষ হলে ফিমেলটাকে সরিয়ে অন্য ট্যাংকে রাখতে হবে। এরপর মেল গোরামীই ডিমের দেখভাল করবে। ৩ দিন পর বাচ্চা বাবল নেস্ট থেকে বের হয়ে আসলে মেল গোরামীকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, একটা ট্যাংকে একাধিক ফিমেল গোরামী থাকলে মেল গোরামী একই সাথে একাধিক/সব ফিমেল গোরামীর সাথে ব্রীড করতে পারে। Men will be men 😜
আগেও যেমন বলেছি, গোরামীই বোধহয় সবচেয়ে আন্ডাররেটেড কালারফুল মাছ। আপনি যদি কালারফুল কমিউনিটি ফিশ পছন্দ করেন এবং আপনি যদি গোরামী কখনো না রেখে থাকেন- কেবল ট্যাংকে ইন্ট্রোডিউস করার পরেই বুঝবেন এতদিন কি ভুলটাই না করেছেন।
© লেখক - শামসুন আরেফীন
COMMENTS