প্ল্যান্টেড একুরিয়ামে লাইটিংয়ের সবচে সহজ ও খুবই সস্তা সোর্স হলো প্যানেল এলইডি। যখন গ্রুপে এই লাইট সাজেস্ট করা শুরু করি ভেবেছিলাম প্যানেল ল...
প্ল্যান্টেড একুরিয়ামে লাইটিংয়ের সবচে সহজ ও খুবই সস্তা সোর্স হলো প্যানেল এলইডি। যখন গ্রুপে এই লাইট সাজেস্ট করা শুরু করি ভেবেছিলাম প্যানেল লাইট যেহেতু প্লাগ এন্ড প্লে এবং ঝামেলাবিহীন, শুধু কমেন্টের মাধ্যমেই এটার ব্যাপারে সবাইকে জানালে চলবে এবং এতদিন এটাই করে আসছিলাম। কিন্তু সমস্যা হলো এত এত গ্রুপ এবং এত এত এক্সপার্ট (!) থাকায় অনেকেই "যেমন খুশি তেমন বলো" টাইপ সাজেশন দিয়ে যাচ্ছেন এবং যারা তা ফলো করছেন তারা তেমন উপকার পাচ্ছেন না। তাই আজকের প্যানেল লাইট নিয়ে এই বিস্তারিত পোস্ট।
১. ওয়াটের ধরনভেদঃ
বর্তমানে বাজারে ৬, ৯, ১২, ১৫, ১৮ ও ২৪ ওয়াটের প্যানেল লাইট পাওয়া যায়। প্যানেল লাইট ওয়ার্ম ও হোয়াইট এই ২ রকমের হয়। মনে রাখবেন, আমরা ট্যাংকে কেবলমাত্র হোয়াইটটাই ব্যবহার করবো। ট্যাংকে কত ওয়াট প্যানেল লাইট লাগবে সেটা বুঝতে প্যানেল লাইটের ওয়াটেজ হিসাব করবেন সিএফএলের দ্বিগুণ হিসাবে। অর্থাৎ আপনার যদি ২৪ ওয়াট সিএফএল লাইট লাগে তাহলে প্যানেল লাইট ১২ ওয়াটই যথেষ্ট। এটা একটা বেসিক রাফ এস্টিমেট হিসেবে ধরতে পারেন, অ্যাবসোলিউট কিছুনা।
অনেকের সুবিধার জন্য লো-টেক এবং মিড-টেক (প্রচলিত টার্ম) ট্যাংকে কেমন ওয়াটের প্যানেল লাইট লাগবে সেটা বলে দিচ্ছি। আগেই বলে নেই, এটা কেবল আমার পর্যবেক্ষণলব্ধ সাজেশন, যারা ব্যতিক্রম করতে চান তারা করতে পারেন। যারা আমার সাজেশন ফলো করতে চান তারা এটা দেখুন-
.
ট্যাংক সাইজঃ লো-টেক মিডটেক
- ১২ কিউব- ৯ ওয়াট ১২ ওয়াট
- ১৮x১২x১২ = ১২ ওয়াট ১৮ ওয়াট
- ১৮x১৫x১৫ = ১৫ ওয়াট ২৪ ওয়াট
- ২৪x১২x১২ = ২টা ৯ওয়াট ২টা ১২ওয়াট
- ২৪x১৫x১৫ = ২টা ১২ওয়াট ২টা ১৫ওয়াট
- ২৪x১৮x১৮ = ২টা ১৫ওয়াট ৩টা ১৫ওয়াট
- ৩৬x১৮x১৮ = ৩টা ১৫ওয়াট ৩টা ১৮ওয়াট
- ৪৮x১৮x১৮ = ৪টা ১৫ওয়াট ৪টা ১৮ওয়াট
এই ট্যাংক ডাইমেনশনগুলার বাইরেও অনেক উইয়ার্ড সাইজ ট্যাংক আছে কিন্তু লিখতে গেলে শেষ হবেনা তাই কিছু প্রচলিত স্ট্যান্ডার্ড সাইজেরগুলাই লিখলাম।
২. প্রাপ্তিস্থান ও দামঃ
.
নবাবপুর ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেটগুলায় এবং গুলিস্তানে স্টেডিয়াম মার্কেটে ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানগুলায় প্যানেল লাইট পাওয়া যাবে। দাম পড়বে এরকম-
- ৬ ওয়াট - ৯০-১০০ টাকা,
- ৯ ওয়াট- ১২০-১৩০ টাকা,
- ১২ ওয়াট- ১৪০-১৫০ টাকা,
- ১৫ ওয়াট- ১৫০-১৬০ টাকা,
- ১৮ ওয়াট- ১৮০-২০০ টাকা,
- ২৪ ওয়াট- ২৫০-২৭০ টাকা।
৩. সেটাপঃ
প্যানেল লাইট প্লাগ এন্ড প্লে সিস্টেম তাই বেশী কিছু করার দরকার নেই। প্যানেল লাইটের সাথে একটি এলইডি ড্রাইভার দেয়া থাকবে যার শেষ প্রান্তে দুইটি তার দেখা যাবে। সেই তারের সাথে একটা লম্বা তার দিয়ে মাল্টিপ্লাগে লাগানোর জন্য টু-পিন প্লাগ জুড়ে দিবেন ( ৩ নং ছবিতে দেখুন)। আর কিছুই করা লাগবেনা। মাল্টিপ্লাগে টু-পিন প্লাগ লাগালেই লাইট জ্বলে উঠবে। টু-পিন প্লাগ সব ইলেক্ট্রিক/হার্ডওয়্যারের দোকানে পাবেন। (ফেসবুকে পাবেন না )
৪. ওয়ারেন্টি ও মুরগীঃ.
আপনি নুব বুঝলে দোকানীরা ওয়ারেন্টিওয়ালা লাইট দেয়ার কথা বলে একই লাইট আপনার কাছে ৩-৪ গুণ দামে বিক্রি করবে (এবং গ্রুপে সাজেশন পেয়েও কয়েকজন মাতবরি করে যা কিনে ধরা খাইসেন )।
সাধারণত একটা প্যানেল লাইট কয়েক বছরেও নষ্ট হয়না তাই ১৫০ টাকার একই লাইট আপনাকে দুই বছরের ওয়ারেন্টি দিয়ে ওরা ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি করবে কারণ ওরা জানে লাইট ২ বছরে নষ্ট হবেনা। আর যদি হয়ও, শুধু ড্রাইভারটা নষ্ট হবে যার দাম আলাদা কিনতে গেলে ৪০-৮০ টাকা। সুতরাং ড্রাইভার নষ্ট হলেও দোকানীর লাভ ছাড়াও এক্সট্রা ২০০ টাকা লাভ থাকছে। সুতরাং ওয়ারেন্টওয়ালা লাইট কেনা থেকে বিরত থাকুন। প্রসঙ্গত বলে নেই, আরএফএলের যে প্যানেল লাইট পাওয়া যায় সেটা কেনা থেকেও বিরত থাকুন কারণ দাম বেশী এবং কোয়ালিটি নিম্নমানের।
৫. যেভাবে বসাবেনঃ
প্যানেল লাইটের উল্টোদিকে দুইটা হ্যাঙিং ক্লিপ দেয়া থাকে (৪ নং ছবি) যার সাহায্যে আপনি রক সুতা দিয়ে সিলিং/দেয়াল থেকে ঝুলিয়ে দিতে পারবেন এবং এভাবেই সবচে সুন্দর লাগে। তাছাড়া অনেকসময় হাইট অ্যাডজাস্ট করে আলো বাড়ানো কমানোর দরকার হলেও তা করা যায় যদি ঝোলানো থাকে। কাঁচের বা কাঠের লাইট স্ট্যান্ডেও বসাতে পারেন। ট্যাংকের পানির সার্ফেসের চেয়ে অন্তত ৫ ইঞ্চি ওপরে লাইট রাখবেন, এতে আলো সবখানে ভালো করে ছড়াবে। কোন কেবল যেন ট্যাংকের পানিতে ডুবে না যায় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। আর এয়ারস্টোনের বাবল প্যানেল লাইটে লাগলে লাইটের কোন ক্ষতি হবেনা।
© লেখক - শামসুন আরেফীন
COMMENTS