ফিশকিপিংয়ের জগতে অন্যতম জনপ্রিয় মাছ হলো গোল্ডফিশ। যারা একুয়ারিস্ট না তাদের কাছে তো একুরিয়ামের মাছ মানেই গোল্ডফিশ। এই কারণেই শুরুতেই অনেক...
ফিশকিপিংয়ের জগতে অন্যতম জনপ্রিয় মাছ হলো গোল্ডফিশ। যারা একুয়ারিস্ট না তাদের কাছে তো একুরিয়ামের মাছ মানেই গোল্ডফিশ। এই কারণেই শুরুতেই অনেকে গোল্ডফিশ কিনে আনেন, ছোটখাটো একটা জার সমেত যেন বাসার যেকোনো চিপায়-চাপায় এডজাস্ট করে ফেলা যায় । ফলাফল, সপ্তাহখানেকের মধ্যে মাছগুলার মৃত্যু (অন্যভাবে বললে, হত্যা!)। তো, ভুল ছিল কিসে? আসুন গোল্ডফিশের রিকোয়ারমেন্টগুলা দেখি।
১.ট্যাংক সাইজঃ
একটা ফ্যান্সি গোল্ডফিশের জন্য মিনিমাম লাগে ২০ গ্যালন পানি। মানে প্রায় ৭৫ লিটার পানি। একটা সিংগেল টেল গোল্ডফিশ বা কোমেট/কার্পের ক্ষেত্রে লাগে কমপক্ষে ৪০ গ্যালন বা ১৫১ লিটার পানি।
এরপর প্রতি একটা মাছের জন্য ফ্যান্সি গোল্ডফিশের জন্য ১৫ গ্যালন, সিংগেল টেলের জন্য ৩০ গ্যালন পানি অ্যাড করা লাগবে । অর্থাৎ দুইটা ফ্যান্সি গোল্ডফিশ রাখতে গেলে লাগবে মিনিমাম ৩৫ গ্যালন এবং দুইটা সিংগেল টেলের জন্য ৭০ গ্যালন পানি। তাইলে বুঝেন জারে রাখার ভয়াবহতা কতটুকু।
২. ফিল্ট্রেশনঃ
মেকানিকাল এবং বায়োলজিক্যাল, উভয় ফিল্ট্রেশনই আবশ্যক। গোল্ডফিশের পাকস্থলী থাকেনা বলে এরা খাবার পেটে রাখেনা, সারাদিন পায়খানা করে। সুতরাং অত্যন্ত ভালো ফিল্ট্রেশন লাগবে। ট্যাংক ওয়াটার ভলিউমের তুলনায় কমপক্ষে ৫ গুণ বায়োলজিক্যাল ফিল্ট্রেশন নিশ্চিত করতে হবে (অর্থাৎ প্রতি ঘন্টায় যেন কমপক্ষে পাঁচবার ট্যাংকের সম্পূর্ণ পানি ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে যায়)। মেকানিকালের ক্ষেত্রে ১০ গুণ করা যেতে পারে। সাম্প, ক্যানিস্টার, টপ ফিল্টার, হব ফিল্টার ইত্যাদি ফিল্টারগুলার মধ্যে আপনার বাজেট ও ট্যাংক রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী এক বা একাধিক ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন। স্পঞ্জ বা পাওয়ারফিল্টার মেইন ফিল্টার হিসেবে গোল্ডফিশ ট্যাংকে ইউজলেস, অ্যাডিশনাল ফিল্টার হিসেবে দেয়া যায় অবশ্য। আন্ডারগ্রাভেল ফিল্টার বা ট্রে ফিল্টার বলে কাঁটাবনের দোকানীরা যেটা ধরায়ে দেয় ওইটা দেয়া যাবেনা।
আর হ্যাঁ, অবশ্যই এক্সট্রা এয়ারস্টোন দিতে হবে এয়ারপাম্পের সাথে কানেক্ট করে।
৩. ট্যাংকমেটঃ
গোল্ডফিশ ছাড়া গোল্ডফিশের সাথে অন্য কোন মাছ রাখা যাবেনা। এমনকি যেসব গোল্ডফিশ ধীরে সাঁতার কাটে তাদের সাথে দ্রুত সাঁতার কাটে এমন গোল্ডফিশ রাখা যাবেনা। এর কারণ ধীরে সাঁতার কাটা মাছ খাবার খাওয়ায় অন্যদের সাথে প্রতিযোগীতায় পারবেনা। যেমন, Bubble Eye কে Orandaর সাথে রাখা যাবেনা।
ক্ষেত্রবিশেষে White Cloud Mountain Minnow বা Zebra Danio রাখা যেতে পারে তবে তাও অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে (যেমন ট্যাংক সাইজ, গোল্ডফিশের প্রজাতি ইত্যাদি)।
৪. সাবস্ট্রেটঃ
বেয়ারবটম ট্যাংক মেইন্টেনেন্সের জন্য সবচে ভালো। স্যান্ড বা ক্রাশড স্টোন দিতে পারেন কিন্তু কাঁটাবনের দোকানের মোজাইক পাথরগুঁড়া দেয়া যাবেনা। কারণ হলো ওইগুলার ফাঁকে ফাঁকে ময়লা জমা হয় যা পানির কোয়ালিটিকে খারাপ করে ফেলে।
৫. পানি চেঞ্জঃ
সপ্তায় ৬০-৭০% পানি চেঞ্জ করা ভালো। বেশী ভালো হয় সপ্তায় দুইবার যদি ৩০% করে করা যায়। ডিরেক্ট ট্যাপের পানি দিলে অবশ্যই এন্টিক্লোরিন দিতে হবে। এজড ওয়াটার হলে দরকার নেই।
৬. এয়ারেশন
গোল্ডফিশ ট্যাংকে পানির উপরের স্তর ওলট-পালট হওয়া জরুরী (Water Surface Agitation). ফিল্টার পর্যাপ্ত সারফেস এজিটেশন করতে না পারলে এক্সট্রা এয়ারস্টোন দিতে হবে এয়ারপাম্পের সাথে কানেক্ট করে। ৩ ফুটের ছোট লেংথের ট্যাংকে একটা এয়ারস্টোন লাগবে। ৩ফুট বা তার বড় লেংথ হলে দুইটা এয়ারস্টোন মাস্ট। আর লেংথ ৫ফুট হলে ৩ টা এয়ারস্টোন অ্যাড করবেন।
৭. খাবারঃ
গোল্ডফিশকে ফ্লোটিং/সিংকিং উভয়ই পেলেটই দেয়া যায়, অনেকেই সিংকিং পেলেট প্রিফার করেন। সিদ্ধ শশা, গাজর, মটরশুঁটি কুঁচি করে কেটে দেয়া যেতে পারে। লাইভ ফুডের মধ্যে টিউবিফেক্স, মিলওয়ার্ম দেয়া যেতে পারে কোন প্যারাসাইট থাকবে না এমন করে যদি নিজের ফ্রেশ কালচার করা হয়। ড্রাই প্যাকেটজাত মিলওয়ার্ম, টিউবিফেক্সও খাওয়াতে পারেন, তাতে প্যারাসাইট সংক্রমণের ঝুঁকি থাকেনা। একধরনের খাবার সবসময় না দিয়ে খাবারে ভ্যারাইটি আনতে পারলে ভালো হয়।
৮. ডেকোরেশনঃ
প্লাস্টিক প্ল্যান্ট দেয়া যায় তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন শার্প না হয়। লাইভ প্ল্যান্টসের মধ্যে আনুবিয়াস, ফার্ণ, এমাজন সোর্ড, ওরিয়েন্টাল সোর্ড দেয়া যায়। অন্য প্ল্যান্টস দিলে গোল্ডফিশ তা নষ্ট করে ফেলবে। পাথর/খেলনা হাবিজাবি যাই দেন না কেন শার্প এজ যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা লাগবে।
সংযুক্তিঃ সবচেয়ে কম খরচে কিভাবে আইডিয়াল গোল্ডফিশ ট্যাংক করবেন জানতে এটা পড়ুন।
COMMENTS