হোয়াইট স্পট কি এবং এর লক্ষন কি? ফ্রেশ ওয়াটার একুরিয়াম এর মাছ এর একটি কমন অসুখ। এটি একটি পরজীবী ঘটিত অসুখ। মাছের গায়ে সাদা লবনের মত দানা দানা...
হোয়াইট স্পট কি এবং এর লক্ষন কি?
ফ্রেশ ওয়াটার একুরিয়াম এর মাছ এর একটি কমন অসুখ। এটি একটি পরজীবী ঘটিত অসুখ। মাছের গায়ে সাদা লবনের মত দানা দানা স্পট/দাগ হচ্ছে এর প্রধান লক্ষন। এর পাশাপাশি আক্রান্ত মাছ শক্ত কিছুর সাথে নিজের গা ঘষবে, ফিন গুলো চিমসে যাবে এবং মাছ সারফেস থেকে অক্সিজেন নেবার চেষ্টা করবে। গুরুতর ভাবে আক্রান্ত মাছের গায়ে ক্ষত, ফাঙ্গাস অথবা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমন ঘটতে পারে।
কারনঃ তাপমাত্রা এবং pH পরিবর্তনের কারনে স্ট্রেস/দুর্বল মাছ এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
কিভাবে এড়াবেন?
১. এক নম্বরে আপনার বাসায় একটি কোয়ারেন্টাইন ট্যাঙ্ক স্থাপন !! আমারা দোকান থেকে মাছ কিনে এনেই আমাদের মেইন একুরিয়ামে ছেড়ে দেই !! দোকান থেকে কিনে আনা মাছে অনেক সময়ই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থাকে। এই জন্য নিয়ম হচ্ছে কিনে আনা মাছ সর্ব প্রথম কোয়ারেন্টাইন ট্যাঙ্ক এ রাখা এবং মিনিমাম এক সপ্তাহ মাছকে পর্যবেক্ষণ করা।
কিভাবে কোয়ারেন্টাইন ট্যাঙ্ক বানাবেন? খুব সহজ একটি ছোট একুরিয়াম (১০-১২ গ্যালন) এ একটি ওয়াটার হিটার, একটি স্পঞ্জ ফিল্টার, একটি থারমমিটার আর একটি অল্প ওয়াটের লাইট। এই নিয়ে সাধারণত একটি কোয়ারেন্টাইন ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়। কোয়ারেন্টাইন ট্যাঙ্ক এ ডেকোরেশন আইটেম, গ্রাভেল না দেয়াই ভাল। কিছু কিছু মাছের ক্ষেত্রে লুকানোর জায়গা করে দেয়া যেতে পারে বড় বড় কিছু পাথর দিয়ে। কোয়ারেন্টাইন ট্যাঙ্ক নিয়ে বিস্তারিত ভবিষ্যতে লেখার ইচ্ছা রইল।
২. Acclimation - যখনি আপনি ট্যাঙ্ক এ নতুন মাছ ছাড়বেন প্রথমে কিছুক্ষণ মাছের প্যাকেট টি একুরিয়াম এ ভাসিয়ে রাখুন, ১০-১৫ মিনিট পর ট্যাঙ্ক থেকে অল্প পানি নিয়ে আস্তে আস্তে ব্যাগে এড করুন। এর পর একটি বালতি বা পাত্রের উপর একটি নেট ধরে ব্যাগ থেকে মাছ গুল নেটে আস্তে করে ঢালুন। এর পর নেটের মাছ কোয়ারেন্টাইন একুরিয়াম/ একুরিয়াম(যাদের কোয়ারেন্টাইন একুরিয়াম) নেই এ ছেড়ে দিন। কখনই ব্যাগের পানি ট্যাঙ্কে এড করবেন না !!
৩. যদি আপনার একের অধিক ট্যাঙ্ক থাকে তা হলে প্রত্যেকটি ট্যাঙ্ক এর জন্য আলাদা আলদা মাছ ধরার নেট ব্যাবহার করুন।
৪. জীবন্ত গাছের ক্ষেত্রেও কোয়ারেন্টাইন প্রসিডিউর ফলো করার চেষ্টা করুন। গাছ ক্রয় করার সময় সবসময় চেষ্টা করবেন যেই ট্যাঙ্ক এ মাছ নেই ওই ট্যাঙ্কে রাখা গাছ কেনার।
৫. শীত কালে অতিরিক্ত সতর্কতা বজায় রাখুন। টাঙ্কের প্রতি নজর বাড়ান।
৬. সবসময় লক্ষ্য রাখবেন যাতে একুরিয়ামের তাপমাত্রা বা pH এর হঠাৎ পরিবর্তন না হয়।
৭. পরিষ্কার পরিছন্ন ট্যাঙ্ক অনেক রোগ থেকে আপনার মাছেকে বাঁচাবে।
৮. কখনই ট্যাঙ্কে অতিরিক্ত মাছ রাখবেন না।
প্রতিকারঃ
১. একুরিয়ামে কোন মাছের মধ্যে রোগের লক্ষন দেখা মাত্র মাছটিকে ট্যাঙ্ক থেকে আলাদা করুন কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বেশির ভাগ মাছই একসাথে আক্রান্ত হয় (আমার অভিজ্ঞতায় দেখা)। যদি প্লান্টেড ট্যাঙ্ক না হয় তবে মাছ গুলোকে মেইন ট্যাঙ্কে রেখেই চিকিৎসা করা ভাল।
২. প্রথমেই ট্যাঙ্কের ৯০% পানি পরিবর্তন করুন (যদিও এটি নিয়ে একেক জনের একেক মতামত রয়েছে কিন্তু আমি এটায় ভাল ফলাফল পেয়েছি।)
৩. ট্যাঙ্কে হিটার সংযুক্ত করুন এবং প্রতি ঘণ্টায় পানির তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বৃদ্ধি করতে থাকুন যতক্ষণ না পানির তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়।
৪. ট্যাঙ্কের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখুন ১০ দিন পর্যন্ত।
৫. ট্যাঙ্কের ফিল্টারে কোন মিডিয়া থাকলে তা পরিবর্তন অথবা ভাল করে পরিস্কার করুন।
৬. পানিতে এক্সট্রা এয়ার স্টোন অথবা স্পঞ্জ ফিল্টার এড করুন।
৭. যদি ট্যাঙ্কে ইল/লোচ অথবা ক্যাট ফিশ জাতিও মাছ না থাকে সে ক্ষেত্রে ট্যাঙ্কে লবন এড করতে পারেন। অবশ্যই আয়োডিন যুক্ত লবন পরিহার করবেন। বাজারে পাওয়া খোলা লবন ব্যাবহার করতে পারলে সব থেকে ভাল। এর বাইরে মেরিন একুরিয়ামে ব্যাবহার করা লবন ও ব্যাবহার করতে পারেন।
৮. ১-২ টেবিল চামচ প্রতি ৫ গ্যালন পানিতে ব্যাবহার করতে পারেন। ছোট এবং দুর্বল মাছের জন্য কম পরিমান এবং বড় মাছের জন্য বেশি পরিমান লবন ব্যাবহার করতে পারেন।
৯. লবন কখনই সরাসরি ট্যাঙ্কে দিবেন না। অবশ্যই ছোট মগ অথবা বোতলে আগে গলিয়ে নিবেন এর পরে লবন গোলা পানি একুরিয়ামে যুক্ত করবেন।
১০. প্রতিদিন ৭৫% পানি পরিবর্তন করুন কিন্তু অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যাতে পানিতে ক্লোরিন বা ব্লিচ না থাকে। ( এজিং করা পানি ব্যাবহার করা সব থেকে নিরাপদ)
১১. মৃত মাছ সাথে সাথে ট্যাঙ্ক থেকে সড়িয়ে ফেলুন। আক্রান্ত ট্যাঙ্ক এ কাজ করে অন্য কোন ট্যাঙ্কে কাজ করতে গেলে অবশ্যই হাত ভাল করে ধুয়ে নিবেন।
১২. মাছের গা থেকে সাদা স্পট চলে যাবার পরেও তিনদিন পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যান।
১৩. ১০-১৫ দিন এই চিকিৎসা চলতে পারে।
১৪. বাজারে কিছু ভাল ওষুধ আছে তা ব্যাবহার করতে পাড়েন কিন্তু আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকায় ওই বিষয় নিয়ে লিখলাম না।
১৫. ফিল্টারে যদি কার্বন/চারকোল থাকে তবে তা প্রথমেই সরিয়ে নিবেন।
© লেখক - মুহাম্মদ আশরাফ সিদ্দিকী
COMMENTS