ঝকঝকে ট্যাংক আর সুস্থ মাছের জন্যে আমাদের রেগুলারই ট্যাংক মেইন্টেনেন্সের দরকার পড়ে। আজ লিখবো সেসব খুঁটিনাটি নিয়ে৷ বেসিক মেইন্টেনেন্সগুলা পয়েন...
ঝকঝকে ট্যাংক আর সুস্থ মাছের জন্যে আমাদের রেগুলারই ট্যাংক মেইন্টেনেন্সের দরকার পড়ে। আজ লিখবো সেসব খুঁটিনাটি নিয়ে৷ বেসিক মেইন্টেনেন্সগুলা পয়েন্ট আকারে দিচ্ছিঃ
১. প্রতি সপ্তায় ওয়াটার চেঞ্জ করতে হবে। টেস্ট কিট থাকলে বেটার। না থাকলে প্রতি সপ্তায় ৩০-৫০% পানি চেঞ্জ করতে হবে। এতে মোটামুটি সেফসাইডে থাকা যাবে যদি ওভারস্টকড ট্যাংক না হয়। ট্যাপের পানিতে ক্লোরিন থাকলে ওয়াটার চেঞ্জের সময় অ্যান্টিক্লোরিন ব্যবহার করতে হবে।
২. কাচ ভিতরের দিকে দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ঘোলা হতে থাকে নানাবিধ কারণে। তাই সপ্তায় অন্তত দুইবার ভিতরের দিকের কাচ স্পঞ্জ/জালি ব্যাগ/মশারীর নেট দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
৩. অন্ততপক্ষে সপ্তায় একবার ফিল্টারের মেকানিকাল মিডিয়া (ফিল্টার ফ্লস/কোরিয়ান কটন) চেঞ্জ করা দরকার বা ওয়াশ করা দরকার। মনে রাখবেন, ট্যাংক চকচকে হলেও কিন্তু ময়লা ফিল্টারে রয়েই যাচ্ছে-যতক্ষণ পরিষ্কার না করা হচ্ছে।
৪. প্রতি ৩ মাসে একবার বায়োলজিকাল মিডিয়া (সিরামিক রিং/বার ইত্যাদি) ট্যাংকের পানি বালতিতে নিয়ে তাতে আলতো করে পরিষ্কার করতে হবে। মিডিয়া ময়লা হয়ে ক্লগড হয়ে গেলে বায়োলজিকাল ফিল্ট্রেশন হবে না। স্পঞ্জ ফিল্টার দুই সপ্তাহে একবার ট্যাংকের পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
৫. অ্যাক্টিভ কার্বন ফিল্টার মিডিয়াতে যদি দেন তাহলে তা ৩ মাস পরপর রিপ্লেস করতে হবে। প্ল্যান্টেড ট্যাংকে অ্যাক্টিভ কার্বন ব্যবহার করা যাবে না।
৬. প্ল্যান্টেড ট্যাংকে ফার্টিলাইজার ডোজিং বোতলের গায়ে লেখা নিয়মে করতে হবে। কিপ্টামী করে দেয়া যাবেনা।
৭. প্রতিদিন খাবার দেয়ার সময় প্রতিটা মাছ ঠিকমতো খাচ্ছে কি না সেটা খেয়াল করতে হবে। মাছের গায়ে কোনও অসুস্থতার লক্ষণ আছে কি না সেটাও তখন চেক করতে হবে। এতে করে রোগবালাই হলে দ্রুত ধরা পড়বে। অনেকেই মরে যাবে দুই ঘন্টার মধ্যে এমন মাছের জন্য হেল্প চেয়ে পোস্ট দেন৷ কী আর বলবো!
৮. রাতে লাইট অফ করার সময় ফিল্টার, এয়ারপাম্প ইত্যাদি ইকুইপমেন্টগুলা চলছে কি না সেটা দেখে নিলে বেটার।
৯. বাইরের কাচে পানি লাগলে সেটা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলা লাগবে। নইলে পানির দাগ পড়ে যাবে।
১০. বাষ্পীভূত হয়ে যতটুক পানি কমে যায় সেটা একদিন পর পর মগ দিয়ে পূরণ করে দেয়া ভালো। নইলে ভিতরের কাচে ওয়াটারমার্ক পড়ে যাবে।
১১. সময়মতো প্ল্যান্টস ট্রিম ও প্রুনিং করতে হবে। ওয়াটার চেঞ্জের আগে করলে বেটার।
১২. পানি চেঞ্জ করার সময় যাদের ট্যাংকে হোয়াইট স্যান্ড আছে তারা স্যান্ড একটা স্টিলের স্কেল দিয়ে নেড়েচেড়ে দিতে পারেন। এতে স্যান্ডে অ্যালজি পড়বে না, সাদা থাকবে পুরনো হলেও। আর গ্রাভেল থাকলে অবশ্যই ভালোমতো নেড়েচেড়ে সাইফন করতে হবে।
১৩. প্ল্যান্টেড ট্যাংকে ৭-৮ ঘন্টা লাইট দিতে হবে এবং তা প্রতিদিন একই সময়ে অন এবং অফ করতে হবে। নন প্ল্যান্টেড ট্যাংকে অ্যালজি না চাইলে ৮-১০ ঘন্টার বেশী আলো জ্বালায়ে রাখা যাবে না। তাছাড়া মাছ ঘুমায়, তাদের সেই সুযোগটা দিতে হবে। সারারাত লাইট জ্বালায়ে রাখা যাবেনা। যদি সিওটু দেয়া লাগে তাহলে লাইট অন করার এক ঘন্টা আগে তা অন করে লাইট অফ করার এক ঘন্টা আগে তা অফ করতে হবে।
১৪. ফিল্টার ইকুইপমেন্ট যেমন পাওয়ারহেড, পাইপ ইত্যাদি মাসে অন্তত একবার খুলে ভালোমতো পরিষ্কার করলে এগুলা অনেকদিন টিকবে।
১৫. প্ল্যান্টেড না এমন ট্যাংকে প্রতিবার পানি চেঞ্জের পর প্রতি ১০ গ্যালন পানিতে এক টেবিল চামচ লবণ ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই সবগুলা কাজ কিন্তু মোটেও বেশী সময় নেয় না। একটা ট্যাংকের পিছনে দিনে ৫ মিনিট আর সপ্তায় একদিন আধা ঘন্টা দিলেই চমৎকারভাবে মেন্টেনেন্স করা সম্ভব৷ আমার ব্যক্তিগত অভিমত, যারা এই সময়টুকু খরচ না করতে পারবেন তাদের এই হবিতে না আসাই ভালো। বর্তমানে আমার ৬টা ট্যাংকের পিছনে দিনে ৫-১০ মিনিট আর সপ্তায় দেড় ঘন্টা সময় ব্যয় হয়।
© লেখক - শামসুন আরেফীন
COMMENTS