পর্ব -১ স্নেকহেডের অনেকগুলো প্রজাতি-উপপ্রজাতি আছে। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারন আমার একার পক্ষে সবগুলো নিয়ে আলাদা ভাবে লেখা সম্ভব না, তবে ...
পর্ব -১
স্নেকহেডের অনেকগুলো প্রজাতি-উপপ্রজাতি আছে। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারন আমার একার পক্ষে সবগুলো নিয়ে আলাদা ভাবে লেখা সম্ভব না, তবে আমি যেসব স্পেসিস রেখেছি অথবা রাখার চিন্তাভাবনা করেছি সেগুলো নিয়েই লেখার চেস্টা করব। আজকের পর্বে স্নেকহেড নিয়ে বেসিক কিছু ধারনা দিবো।
স্নেকহেডের সব মিলিয়ে ৩৫+ প্রজাতি আছে। একুরিয়াম ট্রেডে এর মধ্যে ১০-১২ টা প্রজাতি খুব পপুলার। যেমন- Channa Gachua, Channa Bleheri, Channa Andrao, Channa Asiatica, Channa Barca, Channa argus, Parachana Africana, Channa aurantimaculata ইত্যাদি। এদের মধ্যে বাংলাদেশের একুরিয়াম শপগুলোতে কালেভদ্রে কিছু কিছু প্রজাতি পাওয়া যায়।
স্নেকহেড একটি সাবট্রপিকাল মাছ। এদের একুরিয়ামে সুখী রাখতে হলে অবশ্যই বছরের একটা নির্দিস্ট সময়ে গরম এবং ঠাণ্ডার অনুভুতি দিতে হবে। তারমানে শীতের সময়ে স্নেকহেডের হিটারের কোন প্রয়োজন নেই। আরেকটা ব্যাপার হল অন্যান্য মাছ যেমন ওয়াটার চেঞ্জ পছন্দ করে স্নেকহেড তার ঠিক উল্টো। তারা পানি পরিবর্তন তেমন একটা পছন্দ করে না। তবে স্নেকহেডে ট্যাঙ্কের তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না থাকাই ভাল।
স্নেকহেড খুবই টেরিটোরিয়াল এবং হিংস্র মাছ। তাই এদের জন্য স্পেসিস অনলি ট্যাঙ্ক করাই ভাল। আপনার যদি খুব বড় ট্যাঙ্ক থাকে এবং অনেক হাইডিং প্লেস দিতে পারেন তাহলে ৪-৬ টা একসাথে রাখতে পারবেন। স্নেকহেড(কয়েকটা প্রজাতি বাদে) প্লান্টেড একুরিয়াম সেফ। এরা গাছপালার মধ্যে থাকতে খুবই ভালবাসে সুতরাং যারা প্লান্টেডে মন্সটার মাছ রাখতে চান তাদের জন্য স্নেকহেড আদর্শ। সামনের পর্বে আমি স্নেকহেড ট্যাঙ্ক সেটাপ কিভাবে করতে হয় এবং কি কি ধরনের স্নেকহেড কোন কোন ট্যাঙ্কের জন্য ভাল হবে সেসব নিয়ে আরো বিস্তারিত লিখব। সবাই ভাল থাকবেন।
পর্ব -২ঃ
ডোয়ার্ফ স্নেকহেড ট্যাঙ্ক সেটাপ- প্রথমেই একটা কথা বলে নেই- অনেকেই মনে করেন স্নেকহেড মানেই ১৬-১৭ ইঞ্ছির বিশাল এক মন্সটার মাছ। আসলে এটা ভুল। স্নেকহেডের অনেকগুলো ডোয়ার্ফ স্পেসিস আছে যাদের সাইজে ৫-৯ ইঞ্ছির বেশি হয় না। এদের রাখার জন্য ম্যাসিভ ফিল্টারেশন অথবা বিশাল বড় ট্যাংকের দরকার নেই। একটা ১৫ গ্যালন ট্যাঙ্ক হলেই যথেষ্ট। তবে একের অধিক স্নেকহেড একসাথে রাখতে চাইলে বড় ট্যাংক লাগবেই।
কিছু পপুলার ডোয়ার্ফ স্নেকহেড স্পেসিস গুলো নিচে দিচ্ছি- Channa Andrao, Channa Bleheri, Channa sp. Redfin, Channa sp. Fire and ice, Channa Gachua, Channa sp. Memetic Pulchara, Channa Harcourtbutleri etc.
আসুন আমরা দেখি কিভাবে ট্যাঙ্ক সেটাপ করব-
আমরা ভাবি স্নেকহেড অনেক হার্ডি একটা মাছ। কথাটা আংশিক সত্য। ডোয়ার্ফ স্পেসিসগুলো খুব সহযেই স্ট্রেসড হয়ে যায় এবং ওয়াটার কেমিস্ট্রির চেঞ্জ খুব একটা পছন্দ করে না। তাই নতুন স্নেকহেড কেনার কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে ট্যাঙ্ক সেটাপ দেয়া জরুরী।
ধরুন আপনি ঠিক করলেন আপনি একটা ডোয়ার্ফ স্নেকহেড ট্যাঙ্ক করবেন। সবার আগে ১৫ গ্যালন(নুন্যতম) একটা ট্যাঙ্ক কিনে আনবেন টাইট হুড সহ। ট্যাংকের উচ্চতা যাতে ১৫ ইঞ্ছির বেশি না হয় সেটা খেয়াল করবেন কারন স্নেকহেড এয়ার ব্রিথ করে বেট্টার মত। তাই বেশি হাইটের ট্যাংকে ওরা সহজেই স্ট্রেসড হয়ে পরে এবং মারা যায়। ট্যাংকের সাবস্ট্রেট দিবেন স্যান্ড অবথা একদম ০ সাইজ গ্রাভেল(কালো রঙ হলে ভাল হয়)। একটা হব অথবা স্পঞ্জ ফিল্টার এড করে ট্যাঙ্ক সাইকেল শুরু করে দিবেন। যদি প্লান্টস লাগাতে চান তবে লো মেইন্টেনেন্স প্লান্ট লাগাবেন যেমন ফার্ন, আনুবিয়াস, জঙ্গল ভাল, হাইড্রিলা, হর্নওয়ার্ট ইত্যাদি। ট্যাংকে অনেক রক এবং বগ দিয়ে ভাল করে অনেক হাইডিং স্পেস দিতে হবে। এরপরের কাজ ট্যাংকে প্রচুর পরিমানে শুকনো কাঠবাদাম পাতা দেয়া(IAL)। যাতে কাঠবাদামের ট্যাণিন ট্যাংকের পানি লাল করে ফেলে। এতে করে আপনার স্নেকহেডের নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানো অনেক সহজ হবে এবং সহজে মরবে না। ওয়াইল্ডে স্নেকহেড ছোট ছোট জলাভুমিতে থাকে যেখানে পানির উচ্চতা খুব বেশি হয় না এবং ওয়াটার ফ্লো অনেক কম থাকে। এইটা মিমিক করতে পারলেই হবে।
অবশ্যই একটা থার্মোমিটার এড করতে হবে এবং রেগুলার তাপমাত্রা মনিটর করতে হবে ট্যাংকের তাপমাত্রা যাতে ২৮ ডিগ্রির বেশি না হয়।
ট্যাঙ্ক সাইকেল হলে ট্যাংকের বেশ কিছু ফ্লোটিং প্লান্টস দিয়ে দিবেন। ফ্লোটিং প্লান্টস পানির এক্সট্রা নাইট্রেট শুষে নিবে এবং কভার থাকায় আপনার নতুন কেনা স্নেকহেড জাম্প কম করবে। নতুন স্নেকহেড ট্যাংকে কিভাবে এক্লিমেট করা লাগবে এবং কিভাবে কেয়ার নিতে হবে তা নিয়ে সামনের পর্বে লিখব। সবাই ভাল থাকবেন।
পর্ব-৩:
এই পর্বে আমরা আলোচনা করব কিভাবে দোকান থেকে বেছে সবচেয়ে ভাল স্নেকহেডটা কিনবেন।
শুনতে খারাপ লাগলেও সত্যি দোকানে পাওয়া ৯৫% স্নেকহেড ওয়াইল্ডকট হয়ে থাকে। এই মাছের ব্রিডিং বেশ ঝামেলার ব্যাপার তাই ট্যাংক ব্রিড মাছ পাওয়া যায় না। আর ওয়াইল্ডকট মাছ এমনিতেও তারাতারি স্ট্রেসড হয়ে যায়। বাংলাদেশের দোকানে আসতে আসতে মাছগুলোকে বেশ কয়েকটা নরক পার হয়ে আসতে হয়। অনেক সময় যায়গার অভাবে এক ব্যাগেই অনেকগুলো মাছ একসাথে শিপিং করে, ফলে এদের গায়ের স্কেল উঠে যায় অথবা ফিন ছিড়ে যায়। এছাড়াও ঘন ঘন এক ট্যাঙ্ক থেকে ব্যাগ, ব্যাগ থেকে আরেক ট্যাংকে মুভ করার ফলে অনেক স্ট্রেস হয়ে যায়। যাইহোক দোকানে গিয়ে আগেই চেক করবেন কোন কোন স্নেকহেডগুলোর ফিন ফ্লেয়ার করছে অর্থাৎ ফিন একদম খাড়া অবস্থায় আছে। যদি এমন একটা পান সেটাকে ভালমত কিছুক্ষণ অভজার্ভ করেন। দেখবেন ঠিক মত শ্বাস নিচ্ছে কিনা, সাতার কাটার সময় একপাশে হেলে থাকে কিনা, গায়ে কোন কাটা-ছেড়া আছে কিনা। যদি সব ঠিক থাকে তবে ঐটাকে প্যাকেটে করে বাসায় নিয়ে যাবেন। আর যদি দেখেন গায়ে কাটা-ছেড়া অনেক বেশি, লেজ অথবা পাখার অর্ধেক নাই, কাটা যায়গায় লাল দাগ আছে অথবা কোন কাটা অনেক বেশি গভীর তাহলে সেই মাছটা না কেনাই ভাল। কারন গরম তাপমাত্রায় স্নেকহেড খুব সহজেই ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এবং এটার তেমন কোন কার্যকরী চিকিৎসা নাই। যদি শুধুমাত্র ফিন ড্যামেজ থাকে অথবা গায়ে দুই একটা স্কেল না থাকে তবে সেই মাছের সমস্যা নাই। সেটা নিতে পারেন। ফিন ঠিক হতে বড়জোর ৩-৪ দিন আর নর্মাল কাটা ১-২ সপ্তাহ সময় নিবে কারন এরা যেকোন কাটাছেড়া থেকে খুব দ্রুত সেরে উঠে। ট্যাংকে বেশি বেশি করে শুকনা কাঠবাদাম পাতা(Indian Almond Leaves) দিয়ে দিবেন। আমার এই গোল্ডেন কোব্রার(channa Aurantimaculata) লেজ একদম গোড়া পর্যন্ত ফাটা ছিল। যাস্ট দুইদিন লেগেছে ঠিক হতে। ট্যাংকে শুধুমাত্র কাঠবাদাম পাতা দিয়েছিলাম। মাছ প্যাকেট করার সময় অবশ্যই বলবেন বড় প্যাকেটে বেশি অক্সিজেন সহ দিতে, পানি কম থাকলেও সমস্যা নাই এবং একটা ব্যাগ অথবা কালো পলিব্যাগে করে নিয়ে আসবেন। দিনের আলোতে ট্রান্সপোর্ট করলে এরা ক্রমাগত লাফাতে থাকবে ব্যাগে এবং আরো স্ট্রেসড হয়ে যাবে।
© লেখক - সুব্রত দাশ
COMMENTS